নাটোর প্রতিনিধিঃ প্রায় দেড়শত বছর আগে জমিদার আমলে গড়ে উঠা চলনবিলের ঐতিহ্যবাহী বারুহাস মেলা আগামী ১৬ এপ্রিল রোজ শনিবার। মহামারী করোনার কারনে গত ২ বছর বন্ধ থাকা পর এবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই ঐতিহ্যবাহী মেলা।
প্রতিবছর চৈত্র চন্দ্রিমার ১৩ তারিখে চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশ উপজেলা সদর হতে ১০ কিঃ পশ্চিমে এবং সিংড়া উপজেলা সদর হতে ১৬ কিঃ পুর্বে জমিদার খ্যাত বারুহাস বাজার চত্বরে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
শনিবার দিনব্যাপী মুল মেলা অনুষ্ঠিত হলেও মেলা শুরু হবে শুক্রবার বিকাল থেকেই। এ ছাড়া মুল মেলার পরের দিন রবিবার অনুষ্ঠিত হবে বউ মেলা। এ কারনেই স্থানীয়রা বারুহাস মেলার উৎসব ৩ দিনই মনে করেন। মেলার আয়োজক সুত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, ৭০ দশক থেকে ৯০ দশক সময়েও এ মেলার সুনাম ছিল উত্তর বঙ্গ জুড়ে। অনেক দুর দুরান্তের মানুষ মেলায় আসত। বগুড়া, শেরপুর, সিরাজগঞ্জ, নাটোর ও পাবনা সহ দুর দুরান্তের জেলা থেকে শৌখিন দর্শনার্থীরা মহিষ ও গরুর গাড়ীর বহর নিয়ে মেলায় আসতেন। মেলার এক পাশে তাবু টানিয়ে করতেন মেলার কেনা কাটা।
সে সময় মুলত বারুহাস মেলা ছিল ২৫ থেক ৩০ গ্রামের মানুষের সব চেয়ে বড় উৎসব। মেলার ১ মাস আগে থেকেই চলতো নানা প্রস্তুতি। বাড়িতে লোক কুটুমকে দাওয়াত করা জামাই ঝি আনা, বাড়ি ঘরের লেপ মোচন, খৈ মুড়ি ভাজা সব মিলে মেলা বাসিরা ১ মাস আগ থেকেই ব্যস্ত হয়ে পড়তো।
জামাইদের উপঢোকন বা পরবি দেওয়া ছিল এ মেলার সব চেয়ে বড় ঐতিহ্য। শশুড় বাড়ির পরবি পেয়ে জামাইরা মাছ,মাংস ও রঙিন হাড়িতে মিষ্টি কিনে শশুড় বাড়িতে ফিরতেন।
এ জন্য সে সময় এ মেলা জামাই মেলা নামেও পরিচিত হয়ে উঠেছিল।
২০০০ সালের পর থেকে মেলার জৌলুস ধীরে ধীরে কমতে থাকে। এখন মেলার জৌলুস একেবারেই কমে গেছে। এক সময় ২৫ থেকে ৩০ গ্রামের মানুষের প্রাণের উৎসব ছিল বারুহাস মেলা। সেই মেলার উৎসব এখন শুধু বারুহাস গ্রাম কেন্দ্রিক হয়ে গেছে।
মেলার নির্ধারিত জায়গা সংকট, পৃষ্ঠপোষকতার অভাব সহ নানা কারনে এ মেলার জৌলুস দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে একসসয় দেড়শত বছরের এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখাই কঠিন হয়ে পড়বে।
গ্রামীণ জীবনের এই লোকজ সংস্কৃতি আমাদের দেশের নিজস্ব সম্পদ । এটাকে টিকিয়ে রাখা সকলের দায়িত্ব।
মতিহার বার্তা / এম আর টি
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.